Top News

আ. লীগ নেতা ও তার স্ত্রীর তিন দেশে ৫৮০টি অ্যাপার্টমেন্টের অনুসন্ধান

DAILYNEWS.ORG
আ. লীগ নেতা ও তার স্ত্রীর তিন দেশে ৫৮০টি অ্যাপার্টমেন্টের অনুসন্ধান
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত মোট ৫৮০টি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ করছে দুদক অনুসন্ধান টিম।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এসব সম্পদ ও পাচারকৃত টাকা যাতে অন্যত্র হস্তান্তর না হয়, সেজন্য দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি অ্যাপার্টমেন্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি এপার্টমেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সম্পদের খোঁজে আরও অনুসন্ধানে তথ্য চাওয়া হয়েছে অন্যান্য দেশে।

দুদক এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে করা অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনবিহীন মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে টাকা পাচার, আয়কর নথিতে সম্পদের তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পেয়েছে।দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯ বছরে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে তিনি (জাবেদ) ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান এসব স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক সূত্র আরও জানায়, সংশ্লিষ্ট দেশের ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্টসহ অন্যান্য সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব টাকা বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেই। আয়কর নথিতে বিদেশে সম্পদ অর্জনের কোনো তথ্য নেই। জাবেদ ও তার স্ত্রী ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা আত্নীয়স্বজনের নামে কোন সম্পদ আছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরূপ কিছু পাওয়া গেলে তা তদন্তে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।

দুদক ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে-বেনামে বিভিন্ন দেশে অর্জন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার আদেশ ও অনুমতি চেয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন (পারমিশন পিটিশন নং ৪৫৩/২০২৪) করেছে।দুদক একই সময়ে সাইফুজ্জামান ও রুখমিলার নামে বা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন জানিয়েছে।

দুদক অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা অগ্রসর হচ্ছি। দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। আশা করছি, সবকিছু গুছিয়ে আইনের আওতায় আনতে পারবো।

দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিদেশে অবৈধভাবে অর্জন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তদন্তের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলকে টিম লিডার করে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মাইনুদ্দিন ও উপ সহকারী পরিচালক মো. জুয়েল রানা। কমিশনে বিগত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় সাইফুজ্জামান ও রুখমিলার বিদেশে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের জন্য আদালতের আদেশ প্রার্থনার অনুমতিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি দিয়ে স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এইচ এম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস; সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট; যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রেজিস্ট্রার নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডা-কে অবহিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছে।

এছাড়াও আদালত আরব আমিরাতের তিনটি ব্যাংক শাখায় খোলা ৪টি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্টের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিলন্ডারিং বিভাগ, বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার জন্য দুদকের তদন্ত টিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এ পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে,সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ইসলামী ব্যাংক ও ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক আরব আমিরাত শাখা ও টিডি ব্যাংক, ইউএসএ রয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি বাংলাদেশি ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংক শাখায় ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে বাংলাদেশি জনতা ব্যাংক পিএলসি আরব আমিরাত শাখাও রয়েছে। অপর দু’টি ব্যাংক হচ্ছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক ও ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে খোলা এই ৪টি ব্যাংক এর তথ্যে দেখা গেছে, দুবাই ইসলামিক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৮ জানুয়ারি, ২০১৫ সালে। অ্যাকাউন্ট নং- ০৬৫৫৮০০৭২৯০৬৩০১। এই অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৫ দিরহাম জমা হয়েছে। বর্তমানে জমা রয়েছে ৪২ হাজার ১৫ দিরহাম। ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকে দু’টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এর একটি অ্যাকাউন্ট নং- ১৬১১০০৩৯৩৪৩৫৮০১০। এই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে। এই অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৬ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ৯ লাখ ৮১ হাজার ৪৮৬ মার্কিন ডলার। ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকে উপরোক্ত অ্যাকাউন্ট খোলার ৭ মাস পর একই ব্যাংকে আরও একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। একই ব্যাংকের অপর অ্যাকাউন্ট নং- ১৬৫১০০৩৯৩৪৩৫৮০২৫। এই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২৪ আগস্ট, ২০১৭ সালে। এই অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৯৭৯ দিরহাম। বর্তমানে জমা রয়েছে ৩৪ হাজার ৭৯৪ দিরহাম। জনতা ব্যাংক আরব আমিরাত শাখায় ৩ আগস্ট, ২০২৩ সালে খোলা অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৭০৩১৯৩৩১০০১০১০০০২৫৯৯। এই অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৭৭ দিরহাম। উত্তোলন করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮৮ দিরহাম। বর্তমানে অ্যাকাউন্টের স্থিতি হচ্ছে ৪ হাজার ৭৮৯ দিরহাম।এছাড়া আমেরিকান টিডি ব্যাংকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন ‘জেডটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি’ নামে খোলা বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টে (নং-৪৩৭২২৯৫৮১০) ২০২১ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৪ মাসে ২,০০,২০৬.৭২ মার্কিন ডলার জমা হয়েছে। এসব ডলার ট্রান্সফার হয়েছে হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিংয়ে খোলা ক্যাপিটেল ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম লিমিটেড এবং ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকে খোলা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অ্যাকাউন্ট থেকে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২৯ জুলাই, ২০২১ সালে একই দিনে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং এর ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড ও ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকের সাইফুজ্জামানের অ্যাকাউন্ট থেকে আমেরিকান টিডি ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে ৫০,৯১০.১৮ মার্কিন ডলার। এর তিন দিন আগে ২৬ জুলাই ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক থেকে স্থানান্তর হয়েছে ৮,৯৬০ মার্কিন ডলার। সাংহাই হংকং ব্যাংকিং এর অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২১ সালের ১ জুলাই ৩৪,৬৫০.৮৭ মার্কিন ডলার, ১৯ এপ্রিল ৪৮,৮৫১.৯৫ মার্কিন ডলার এবং ২ এপ্রিল ৫,৬৮৩.৭২ মার্কিন ডলার টিডি ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং রুখমিলা জামানের নামে প্রতিষ্ঠিত ১০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ৮টি এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post